শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪
২৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতেই হত্যা করা হয় নড়াইলের আনিচুরকে

অনলাইন ডেস্ক | আপডেট: মঙ্গলবার, জুন ১১, ২০২৪

ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতেই হত্যা করা হয় নড়াইলের আনিচুরকে
নড়াইল জেলার নড়াগাতীর কলাবাড়িয়া গ্রামের শেখ আনিচুর রহমান নামে এক যুবককে হাত-পায়ের রগ কেটে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তাদেরকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার নেপথ্যের কারণ বেরিয়ে এসেছে। তারা বলছে, স্থানীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ভাই ছিলেন নিহত ব্যক্তি। তাকে উচিত শিক্ষা দিতেই তারা এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটায়। এর আগে র‌্যাব-৩ ও র‌্যাব-৬ সোমবার যৌথ অভিযানে তাদেরকে রাজধানীর শাহবাগ থেকে গ্রেফতার করে।

আজ মঙ্গলবার (১১ জুন) সকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফিরোজ কবীর।

ফিরোজ কবীর জানান, এটি একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডের মূলপরিল্পনাকারী ছিল গ্রেফতারকৃত জাহিদুল ও নির্দেশদাতা ছিল ওসিকুর। ছলে-বলে পরিকল্পিতভাবে সুবিধাজনক স্থানে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল হাছানুর এবং মঞ্জুরের। ইটভাটায় হত্যা পরিকল্পনায় প্রথম ধাপে ছিল শামীম শেখ ও জুলফিকারের নেতৃত্বে ১২-১৩ জনের একটি দলের। পরে দ্বিতীয় ধাপে বাস্তবায়নে ছিল গ্রেফতারকৃত হানিফের নেতৃত্বে ৪-৫ জনের একটি দল। অবশেষে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করে মূল পরিকল্পনাকারী জাহিদুল ও তার সহযোগী হাছানুর, শামীম শেখ, জুলফিকার, রাশিদুল ও শিহাব শেখসহ অন্যান্যরা।

যেভাবে হত্যা করা হয়
নিহতের ভাই ও মামলার বাদী শেখ সোহেল রানা কলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের একজন নির্বাচিত সদস্য এবং গ্রেফতারকৃত জুলফিকার তার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। নির্বাচন ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে তাদের দুই পক্ষের মধ্যে দা-কুমড়া সম্পর্ক ছিল। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আনিচুরকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য গ্রেফতারকৃত জাহিদুল তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে গ্রেফতারকৃত মূল পরিকল্পনাকারী জাহিদুল তার সহযোগী হাছানুর রহমান রিপন এবং মঞ্জুর শিকদারের সহায়তায় সুপরিকল্পিতভাবে গত ৩১ মে বিকেলে নিহতকে নিজ বাড়ি থেকে ডেকে টুকু মোল্লা নামে এক ব্যক্তির ফোর ব্রাদার্স নামের ইট ভাটার ভেতরে নিয়ে যান। ইট ভাটার ভেতরে তাকে গ্রেফতারকৃত শামীম শেখ ও জুলফিকারের নেতৃত্বে রাশিদুল, রহিম, লিটু, হিটু, আজিজ, শহীদ শেখ, ইরফান শেখসহ ১২-১৩ জন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখান। পরে তিনি প্রাণের ভয়ে দৌড়ে ভাটার পাশে বাঁশের বেড়া দেওয়া একটি ঘরে আশ্রয় নেন। যেখানে ওঁৎ পেতে ছিল গ্রেফতারকৃত হানিফের নেতৃত্বে মনিরুজ্জামান, সেকন শেখ, নাইম শেখসহ ৪-৫ জন। তারা তাকে ধরতে গেলে নিহত আনিসুর বেড়া ভেঙে পাশের জমিতে পড়ে যান। এসময় ওসিকুর রহমান এর নির্দেশে ও মূল পরিকল্পনাকারী জাহিদুলের নেতৃত্বে হাছানুর, শামীম শেখ, জুলফিকার, রাশিদুল ও শিহাব শেখ চাপাতি, ছ্যানদা ও রামদা দিয়ে নৃশংসভাবে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে।

র‌্যাব বলছে, গ্রেফতারকৃত জাহিদুল এই হত্যা মামলা ছাড়াও ২০২০ সালে নড়াগাতী থানায় বাংলাদেশ জাতীয় কাবাডি দলের খেলোয়াড় কাইয়ুম শিকদার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে কুষ্টিয়ার খোকশা থানায় একটি ধর্ষণ মামলা ও যৌতুকের জন্য মারপিটের মামলা রুজু করা হয়। তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী সহিংসতা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০০২ ও ২০২৩ সালে পৃথক মামলায় গুরুতর জখম করার অভিযোগ পাওয়া যায়। জাহিদুল শেখ পেশায় একজন খাবার হোটেল ব্যবসায়ী।


গ্রেফতারকৃত শামীম শেখও আলোচিত কাইয়ুম শিকদার হত্যা মামলার অন্যতম এজাহারনামীয় আসামি। তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী সহিংসতাকে কেন্দ্র করে নিহতের ভাই সোহেল রানাকে মারধরের নড়াগাতী থানায় ৪টি পৃথক মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত শামীম ২০১৪ সালে নড়াগাতী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে। পেশায় সে স্থানীয় একটি স্কুলের অফিস সহায়ক।


গ্রেফতারকৃত জুলফিকারও বাংলাদেশ জাতীয় কাবাডি দলের খেলোয়াড় কাইয়ুম শিকদার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। তার বিরুদ্ধে প্রতিবেশী জনৈক গাউশেখকে গুরুতর জখম ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে নড়াগাতী থানায় পৃথক ২টি মামলা হয়। তিনি পেশায় একজন কৃষক।


এছাড়াও গ্রেফতারকৃত হাছানুরের নামে কাইয়ুম হত্যা মামলা, প্রতিবেশী জনৈক রফিকুল ও আবুল হাসনাতকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গুরুতর জখম ও মারধরের ২০১৯, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের নড়াগাতী থানায় পৃথক তিনটি মামলা রয়েছে। তিনি পেশায় একজন ঘের ব্যবসায়ী।


এছাড়াও গ্রেফতারকৃত রাশিদুল এর বিরুদ্ধে ১টি হত্যা ও ১টি মারামারির মামলা, আজিজের বিরুদ্ধে ১টি হত্যা ও ১টি মারামারির ২টি মামলা, তৈয়েবুর এর বিরুদ্ধে ১টি হত্যা ও ৪টি মারামারিসহ মোট ৫টি মামলা, শরিফুলের বিরুদ্ধে ১টি হত্যা ও ২টি মারামারিসহ ৩টি মামলা, সাইফুল এর বিরুদ্ধে ১টি হত্যা ও ২টি মারামারিসহ মোট ৩টি মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
0 Comments