শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪
১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাসপাতালের লিফটে ৪৫ মিনিট আটকে থেকে রোগীর মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক | আপডেট: রবিবার, মে ১২, ২০২৪

হাসপাতালের লিফটে ৪৫ মিনিট আটকে থেকে রোগীর মৃত্যু
গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার লিফটে আটকে থেকে মমতাজ বেগম (৫০) নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার (১২ মে) সকালে মেডিসিন বিভাগ থেকে সিসিইউতে স্থানান্তরের সময় লিফটে ৪৫ মিনিট আটকে থেকে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

মমতাজ বেগম গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিগাঁও গ্রামের শরীফ উদ্দীনের স্ত্রী।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. কামরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সম্ভবত কয়েক দিন আগে তাঁর (মমতাজ) হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এ অবস্থায় তিনি আজ রোববার ভোরে তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এলে তাঁকে ১১ তলার মেডিসিন বিভাগের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তাঁর হার্ট অ্যাটাকের বিষয়টি ধরা পড়ে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁকে চতুর্থ তলায় কার্ডিওলজি বিভাগের সিসিইউতে পাঠানো হয়। ওয়ার্ড থেকে সিসিইউতে নেওয়ার জন্য তাঁকে লিফটে তোলা হয়। লিফটটি অজ্ঞাত কারণে আটকে যায়। সেখানে প্রায় ৪০ মিনিট আটকে থাকার পর লিফট থেকে উদ্ধার করা হলে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

এর আগে গত ৪ মে চিকিৎসা নিতে আসা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১২ তলা থেকে পড়ে গিয়ে জিল্লুর রহমান (৭০) নামের এক রোগী মৃত্যুবরণ করেন। তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দরদরিয়া এলাকার বাসিন্দা। গত ৪ মে রাত পৌনে ১১টার দিকে হাসপাতালের ১২ তলায় মেডিসিন বিভাগের পাশের বিদ্যুৎ রক্ষণাবেক্ষণ কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই লিফটে আটকে থেকে রোগীর মৃত্যু হলো।

মারা যাওয়া মমতাজ বেগমের স্বামী শরীফ উদ্দীনের অভিযোগ, ‘লিফটে নামানোর সময় আমি লিফটের বাইরে ছিলাম। পরে যখন লিফট আটকে যায়, তখন আমি একবার তিনতলায় (প্রশাসনিক ভবন), একবার পাঁচতলায়, একবার সাততলায় বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে দৌড়াদৌড়ি করি। আমার রোগীকে উদ্ধার করার জন্য, তাকে বাঁচানোর জন্য তাঁদের কাছে আবেদন-নিবেদন করি। কিন্তু তাঁরা আমার আবেদনে সাড়া দেন নাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসা দিলে আমার রোগী হয়তো বেঁচে যেতে পারত।’

রোগীর ভাগনে সেলিম প্রধান বলেন, ‘আমরা আজ রোববার ভোরে বাড়ি থেকে রওনা হয়ে সোয়া ৬টার দিকে রোগীর শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসি। রোগীকে প্রথমে হাসপাতালের ১১ তলায় মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা করে রোগীর হার্ট অ্যাটাক ধরা পড়ে। রোগীর প্রেশার কম ছিল। তাঁর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ১১ তলার মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে রোগীকে চতুর্থ তলার হৃদ্‌রোগ বিভাগের সিসিইউতে পাঠানো হয়। আমরা দ্রুত রোগীকে নিয়ে লিফটে নিচে চতুর্থ তলায় যাওয়ার জন্য লিফটে উঠি। তারপর হঠাৎ ১০ তলা এবং ৯ তলার মাঝামাঝি এসে লিফটটি আটকে যায়। এ সময় ভয়ে আমাদের মধ্যে এক বিভীষিকাময় অবস্থার সৃষ্টি হয়। লিফটে আমাদের সঙ্গে ১০-১২ জন আটকা পড়েছিল। এ সময় ভয়ে নারী ও শিশুরা কান্না শুরু করে এবং অনেকে দোয়া পড়তে থাকে। আমরা আমাদের উদ্ধারের জন্য ডাকাডাকি করি কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। পরে লিফটের ভেতর থেকে ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দিলে, তারা এসে লিফট বলপূর্বক ফাঁকা করলে আমরা বের হয়ে আসি। ততক্ষণে আমাদের রোগী মৃত্যুবরণ করে।’

সেলিম প্রধান আরও বলেন, ‘আমরা লিফটের ভেতরে প্রায় ৪৫ মিনিট আটকা ছিলাম। হাসপাতালের লোকজন যদি আমাদের দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা নিত এবং সিসিইউতে নিয়ে আমার রোগীকে চিকিৎসা দিতে পারতাম। তাহলে হয়তো আল্লাহ আমাদের রোগীকে বাঁচিয়েও দিতেন।’ এ ঘটনার জন্য হাসপাতালের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আমরা তদন্ত করে এর বিচার চাই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (উপপরিচালক) ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। তবে চিকিৎসার অভাবে রোগী মারা যাননি। লিফটের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে রোগী আটকে গিয়ে মারা গেছেন। এ ঘটনা তদন্ত করার জন্য চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি আগামী তিন দিনের মধ্যে লিফট আটকে যাওয়া এবং রোগীর মৃত্যুর কারণ উদ্‌ঘাটন করে প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন পেলে সে অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
0 Comments