মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩
১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সুন্দরবনে বেড়েছে বাঘের আনাগোনা

অনলাইন ডেস্ক | আপডেট: শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩

সুন্দরবনে বেড়েছে বাঘের আনাগোনা
এম.এম হায়দার আলী  
পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে বেড়েছে বাঘের পদ চারণা। বনে ঘুরতে যাওয়া পর্যটক এবং বনকর্মীরা প্রায়ই বাঘ দেখতে পাচ্ছেন। অবশ্য বন বিভাগের দাবি, ৯০দিন বনে পর্যটক ও জেলে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকা, বাঘের বাচ্চার প্রজনন বাড়া-মৃত্যুহার কমা, পিটিয়ে হত্যা নিয়ন্ত্রণ এবং অভয়রাণ্যের সীমানা বাড়ায় আগের তুলনায় বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। সূত্রমতে, সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী সুরক্ষা সহ সার্বিক উন্নতি কল্পে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে। আবারো চলতি মাসের প্রথমে সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের ভাষ্যমতে, ক্রাউন নামের একটি জলযানে সুন্দরবন ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকরা একটি বাঘকে শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী এলাকার নদী সাঁতরে পার হতে দেখেন। এছাড়া শরণখোলা রেঞ্জের কটকা এলাকায় সাঁতরে একটি বাঘকে নদী পার হতে দেখার দুর্লভ সুযোগ পান সাম্পান নামের আরেক জাহাজের পর্যটকরা। একই দিন দুপুরে শরণখোলা রেঞ্জ অফিসের কাছে আলীবান্দা এলাকায় আরেকটি বাঘকে নদী সাঁতরে পার হতে দেখেন বনরক্ষীরা। তাদের ভিডিও করা সেই দৃশ্য এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
সম্প্রতি  শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্র অফিসের সামনে বাঘের দেখা মেলে। বাঘটি বন রক্ষীদের ব্যারাকের খুব কাছে চলে আসে। এ সময় মোবাইলে বাঘটির ভিডিও ধারণ করেন এক বনরক্ষী। একই দিনে  বনের সুপতি স্টেশনের চন্দেশ্বর ফরেস্ট অফিসের পুকুর পাড়ে প্রায় ২৪ ঘণ্টা তিনটি বাঘকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। গত বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি বন বিভাগের কর্মীরা কটকার কাছাকাছি দুটি বাচ্চাসহ মা বাঘ দেখতে পান। ১২ মার্চ বনের ছিটা কটকা এলাকায় একসঙ্গে চারটি বাঘ দেখতে পান পর্যটকরা। নুয়ে পড়া গাছের ওপর একটি বাঘের বাচ্চা দেখেন পর্যটকরা।  তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায় , চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সুন্দরবনের সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘশুমারি করা হয়। ওই শুমারিতে বনের কয়েকটি স্থানে এবার বড় বাঘের সঙ্গে বাচ্চার ছবিও ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। এ ছাড়া গোটা সুন্দরবনে খাল সার্ভের মাধ্যমে বাঘের পায়ের ছাপ সংগ্রহ করা হয়েছে।
যা আগামী নভেম্বর থেকে বনের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে একই পদ্ধতিতে বাঘশুমারি করা হবে। প্রতিটি রেঞ্জের ১৪৫টি পয়েন্টে দুটি করে ক্যামেরা স্থাপন করা হবে, যা থাকবে ৪০ দিন। ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে পাওয়া ছবি এবং বাঘের পায়ের ছাপ ঢাকায় ল্যাবে পর্যালোচনা করা হবে। এরপর ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই বাঘ দিবসে বাঘশুমারির ফল প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজে নিয়োজিতরা বলেন, আগে বনের যেসব এলাকায় বাঘের উপস্থিতি দেখা যায়নি, ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ে সেখানে এবার বাঘের আনাগোনা পাওয়া গেছে। সে কারণে মনে হচ্ছে, আগের তুলনায় বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের’ পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মো. মহসিন হোসেন বলেন, ৯০ দিন বনে পর্যটক ও জেলে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় বাঘ চলাফেরায় অবাধে চলাচল করেছে। সে কারণে পর্যটক প্রবেশ শুরু হওয়ার পর থেকে তারা বাঘ দেখতে পাচ্ছেন। কিছুদিনের মধ্যে বাঘ যখন পর্যটক-জেলেদের আনাগোনা দেখলে তখন বনের বেশ ভেতর চলে যাবে। তিনি বলেন, অভয়ারণ্য আগে ছিল ২৩ শতাংশ এখন ৫২ শতাংশ। অর্থ্যাৎ অভয়রাণ্য বাড়ায় বাঘের প্রজননও বেড়েছে। এছাড়া আগে বাঘের বাচ্চার মৃত্যুহার বেশি ছিল। অভয়রাণ্যের কারণে মৃত্যুহারও কমেছে। সে কারণে এখন বাঘ দেখা যাচ্ছে বেশি। এছাড়া বাঘ পিটিয়ে হত্যা কমেছে এবং দস্যুমুক্ত হওয়াতে বাঘের বাচ্চা বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। সেকারণেও বাঘ বাড়ছে। বিভাগীয় এই বন কর্মকর্তা বলেন, বনে বাঘের প্রধান শিকার চিত্রা হরিণ ও বন্য শূকরের সংখ্যা বেড়েছে। খাবারের সংকট না থাকায় বাঘের লোকালয়ে হানা দেওয়া কমেছে। আগের তুলনায় খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে বাঘ আসার প্রবণতা কমেছে। সে কারণে পিটিয়ে বাঘ হত্যার ঘটনাও কম। এছাড়া র‌্যাবের তৎপরতার কারণে সুন্দরবনে বনদস্যু ও বাঘ শিকারিদের তৎপরতা আগের তুলনায় কম। সে কারণে হয়তো বাঘের সংখ্যা বড়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘ ছিল ১০৬টি। আর ২০১৮ সালে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে করা শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪টি বলে জানা যায় ।
0 Comments